[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

কয়রা ও শিবসা সেতুর টোল মওকুফের দাবী।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনা ঃ
খুলনা-কয়রা সড়কে অবস্থিত শিবসা ও কয়রা সেতুর টোল মওকুফের জন্য স্থানীয় জনগণ দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছেন। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে থাকা এ সেতু দিয়ে যাঁরা চলাচল করেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাঁদের দাবী সেতুর ইজারা নেওয়া লোকজন তাঁদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফির দ্বিগুণ কখনো তিন গুণ করে টোল আদায় করেন। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে একাধিকবার হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

দুর্যোগকবলিত এ এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সেতু দুটির দুই ও তিন চাকার যানবাহন টোলমুক্ত করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু জাতীয় সংসদে দাবী তুলেছেন। ১৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবে অংশ নিয়ে তিনি এ দাবী জানান।

কয়রার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত উপকূলীয় এ জনপদে বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর লড়াই করে। তাঁদের খেতের উৎপাদিত ফসল এবং ঘেরের মাছ বিক্রির জন্য ভ্যান, ট্রলি, মোটরসাইকেল অথবা পিকআপে করে শহরে নিতে হয়। আসা-যাওয়ার পথে এ দুটি সেতুর টোল নিয়ে প্রায়ই টোল আদায়কারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা এমনকি হাতাহাতি হয়। ইজারাদারের লোকজনের হাতে অহরহ এলাকার কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিগৃহীত হন। যে কারণে প্রথম থেকেই ছোট এ সেতু দুটির টোল মওকুফের দাবী জানিয়ে আসছেন স্থানীয় জনগণ।

রেজাউল বিশ্বাস নামের এক নছিমনচালক অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন তিনি এ সেতু দিয়ে মালামাল পরিবহন করেন। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর টোল ১০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও তাঁর কাছ থেকে প্রতিবার ৩০ টাকা নেওয়া হয়। এক দিন কয়রা সেতুতে টোলের টাকা দিতে দেরি করায় টোল আদায়কারীরা তাঁকে মারধর শুরু করেন। এ সময় তাঁর চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে টোল আদায়কারীদের নিবৃত্ত করেন।

ওই পথে যাতায়াতকারী মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য ৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও তাঁরা ১০ টাকা নেন। কিছু বলতে গেলে অপমানজনক কথা বলেন। টোল আদায়ের নামে এখানে একধরনের চাঁদাবাজি চলছে। প্রতিবাদ করলে টোল আদায়কারীদের রোষানলে পড়তে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো লাভ হয় না।

সওজ সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে এ সেতু দুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকে নিয়মিত সেতু দুটি ইজারা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় কয়রা সেতু এবং ৮২ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় শিবসা সেতু তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সেতুর ইজারাদার মিনারুল ইসলাম অতিরিক্ত হারে টোল নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘পাশের বটিয়াঘাটা ও আশাশুনি উপজেলায় এ ধরনের কয়েকটি সেতু থাকলেও সেখানে টোল আদায় করা হয় না। অথচ অপেক্ষাকৃত কম দৈর্ঘ্যের কয়রা ও শিবসা সেতুতে অব্যাহতভাবে টোল আদায় করা হচ্ছে। এলাকার দরিদ্রপীড়িত মানুষের কথা বিবেচনা করে এ সেতু দুটির টোল মওকুফ করলে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য আনা–নেওয়া করতে পারবেন।’

খুলনা-৬ (পাইকগাছা ও কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, এলাকার দরিদ্রপীড়িত মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ইতিপূর্বে তিনি টোল মওকুফের একটি ডিও লেটার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। করোনা মহামারীর কারণে এ বিষয়ে তখন কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তবে পুরোপুরি টোলমুক্ত না হলেও দুই ও তিন চাকার যানবাহনগুলো যাতে টোলমুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানান তিনি।

কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি
তারিখ : ২১/০১/২৩ ইং।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *